দুই ছেলের মৃত্যুর পর দুই নাতি ও এক পূত্রবধূর মুখে দুমুঠো খাবার তুলে দিতে ২৫ বছর ধরে ভিক্ষাবৃত্তি

ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার রাজাপুর সদর ইউনিয়নের আয়নাল আলী ২৫ বছর ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তার দুই ছেলের মৃত্যুর পর দুই নাতি ও এক পূত্রবধূর মুখে দুমুঠো খাবার তুলে দিতে ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে প্রায় পঁচিশ বছর ধরে জীবন চালাচ্ছেন তিনি। যুবক বয়সে দিনমজুরের কাজ করতেন। পরে চালাতেন নৌকা। তবে এখন ভিক্ষাবৃত্তিই তার পেশা।

শতবর্ষী আয়নাল আলী জানান, বয়স প্রায় একশ বছরের কাছাকাছি। এ বয়সে ভিক্ষার ঝুলি বহন করতে আর পারছেন না। বসতভিটার ৬ শতাংশ ছাড়া চাষযোগ্য কোনো জমি নেই। যুবক বয়সে দিনমজুরের কাজ করতেন। পরে কষ্টের কাজ না করতে পেরে একটি টাপুরে নৌকা তৈরি করে চালাতেন। নৌকা চালিয়ে কেটেছে প্রায় বিশ বছর। কালের বিবর্তনে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়ে বৈঠা ছেড়ে ভিক্ষার ঝুলি হাতে নেন।

প্রায় ২৫ বছর ধরে এভাবেই জীবন চালাচ্ছেন আয়নাল আলী।স্থানীয়রা জানান, তার বড় ছেলে বজলু ঢাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ থেকে পড়ে তার মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে যায়।পরে ২০১৬ সালে তিনি মারা যান। তার আরেক ছেলে বুদ্ধি প্রতিবন্ধি রফিক ২০১০ সালে মারা যান।

আয়নাল আলীর পূত্রবধূ রহিমা বেগম জানান, স্থানীয় মেম্বারের সহায়তায় শ্বশুরের নামে বয়স্ক ভাতা ও তার নিজের নামে বিধবা ভাতার কার্ড করিয়েছেন। দুটি কার্ডের অর্থ ও শতবর্ষী বৃদ্ধ শ্বশুরের ভিক্ষার টাকা দিয়ে কোনোরকম সংসার চলছে।

রাজাপুর সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন মজিবর মৃধা বলেন, আয়নাল আলীকে বয়স্ক ভাতা ও তার পূত্রবধূ রহিমনকে বিধবা ভাতার কার্ড, ১০ টাকা মূল্যের চালের রেশন কার্ড এবং করোনাকালে ত্রাণ ও নগদ অর্থ দেয়া হয়।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল বলেন, তারা চাইলে সহজ শর্তে ২০-৩০ হাজার টাকা লোন নিয়ে ব্যবসা করতে পারেন।ইউএনও মো. মোক্তার হোসেন বলেন, ভিক্ষুকদের সহায়তার ফান্ড আছে। সেখান থেকে অফেরতযোগ্য সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা দেয়া যেতে পারে। তার সঙ্গে তারা আরও কিছু অর্থ যোগ করে ব্যবসা করতে পারেন। ধনাঢ্য ও হৃদয়বান ব্যক্তিরা সাহায্য করতে পারেন।

আয়নাল আলীর পূত্রবধূ রহিমা বেগমের নম্বর : ০১৭৮২ ৭০২৫১৬ (বিকাশ)।